Headlines News :
Home » » দ্য বিউটি কুইন অব স্পার্টা হেলেন কাহিনী

দ্য বিউটি কুইন অব স্পার্টা হেলেন কাহিনী

Written By ভোরের বার্তা on শুক্রবার, ১৭ জানুয়ারী, ২০১৪ | ২:৪৪ AM

খ্রিস্টপূর্ব ১২১৪ অব্দে জিউস ও লিডার ঘর আলোকিত করে পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করে ছোট অথচ ফুটফুটে একটি শিশু। বাবা জিউস কন্যাশিশুর কথা শুনে আনন্দে আত্মহারা হয়ে যান। মা লিডা বারবার চুমো খেতে থাকে ছোট কন্যাশিশু কপালে।

শিশুটির নাম কি রাখা হবে এ নিয়ে যখন সবাই ব্যস্ত, তখন এক জ্যোতিষী শিশুটির নাম রাখলেন হেলেন! আর বললেন নামের কারণেই মেয়েটি পৃথিবীতে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।



প্রাচীনকালে গ্রিক বিভিন্ন রাজ্যে বিভক্ত ছিল_ স্পার্টা, আর্পস ছিল তার অন্যতম। স্পার্টার রাজার নাম ছিল মেনিলাস, আর্পসের রাজার নাম ছিল আগামেনন। মেনিলাস ও আগামেনন সম্পর্কে ছিল আপন ভাই। মেনিলাসের ছিল একাধিক স্ত্রী। একাধিক স্ত্রী থাকা সত্ত্বেও সে ছিল ভয়ানক নারীলোভী।

অন্যদিকে জিউসের কন্যা হেলেন আস্তে আস্তে বড় হতে থাকে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হেলেনের রূপ-লাবণ্য আর আকর্ষণীয় চাহনির সংবাদ ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। এক সময় স্পার্টার রাজা মেনিলাসের কানেও চলে আসে সেই খবর। হেলেনের জন্য পাগল হয়ে ওঠলেন মেনিলাস। প্রায় ৬০ জন প্রহরী নিয়ে হাজির হয় জিউসের বাড়িতে, রাজার অনুরোধ আর বিনয়ে মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজি হয়ে যান জিউস! শুরু হয় নতুন অধ্যায়ের। মেনিলাস বয়সে ৪০ বছরের বড় হলেও জীবনের চেয়ে বেশি ভালোবাসতেন হেলেনকে। মেনিলাস হেলেনের জন্য প্রহরী নিযুক্ত করেন প্রায় ৮০ জন, তার গোসল, খাওয়া-দাওয়া, কাপড়-পরিধান এমনকি চুল আঁচড়ানোর জন্যও সেবিকারা থাকত সদাব্যস্ত। হেলেনের মুখের হাসি দেখার জন্য মেনিলাস নানা উপায় অবলম্বন করতেন, কখনো গোলাপ ফুল, কখনো দামি শাড়ি নিয়ে হাজির হতেন হেলেনের সামনে। নানা আয়োজনে হেলেনকে ভালোবাসতে চাইলেও হেলেন মোটেই ভালোবাসতেন না মেনিলাসকে! সব সময় ভিন্ন কিছু পাওয়ার আশায় উদাসীন থাকতেন হেলেন। কালেভদ্রে হাসি ফুটতো হেলেনের মুখে। নিজেকে সব সময় আড়ালে রাখতেই পছন্দ করতেন তিনি। নিজের মনের কথা কখনো কাউকে খুলে বলতেন না।

গ্রিক ও ট্রয় (বর্তমান তুরস্ক) পাশাপাশি দুটি রাষ্ট্র; কিন্তু মধ্যে ছিল এজিয়ান নামক বিখ্যাত সাগর। ১২৩০ সালের দিকে ট্রয়ের রাজপুত্র প্যারিস ও হেক্টর আসে স্পার্টায় ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত চুক্তি সম্পন্ন করার জন্য। স্পার্টার রাজা মেনিলাস প্যারিস ও হেক্টরকে সাদরে সম্বোধন জানায়। তাদের আগমনে রাজ্যকে লাল-নীল বাতিতে চমৎকারভাবে সাজানো হয়। নৈশভোজের বিপুল সমারোহের পর প্যারিস ও হেক্টরকে সবার সঙ্গেই পরিচয় করিয়ে দেন রাজা মেনিলাস। এক পর্যায়ে হেলেনের সঙ্গে পরিচয় ঘটে রাজপুত্র প্যারিসের। ব্যবসায়িক আলোচনার জন্য স্পার্টায় বিশদিন থাকার প্রয়োজন হয়ে পড়ে প্যাসিস ও হেক্টরের। হেক্টর ও মেনিলাস বেশি ব্যস্ত থাকতেন ব্যবসা-বাণিজ্যের চুক্তি নিয়ে। আর গোপনে সবার চক্ষুর আড়ালে প্যারিস দেখা করতেন হেলেনের সঙ্গে। প্যারিসের চেহারা, গায়ের গড়ন, শরীর কাঠামো সবকিছুই হেলেনকে বিমোহিত করে, প্রথমে রাজি না থাকলেও আস্তে আস্তে প্যারিসের প্রতি প্রচণ্ড দুর্বল হয়ে পড়েন হেলেন। যাই হোক নির্ধারিত সময় শেষে ট্রয়ে ফিরে যাবেন হেক্টর ও প্যারিস। ভোর হলেই তারা রওনা দেবেন ট্রয়ের উদ্দেশে। রাজা মেনিলাসের আপ্যায়নের কোনো কমতি নেই। খাবার-দাবার আর সুন্দরী রমনীদের নাচের দৃশ্য সাজিয়েছে শেষ নৈশভোজ। নর-নারী, প্রহরী ও হেক্টর, রাজা ও ট্রয়ের অতিথিরা যখন আমোদ-প্রমোদ আর নাচ-গান নিয়ে ব্যস্ত তখন প্যারিস গোপনে চুপিসারে যান হেলেনের ঘরে। নিবিড় আলিঙ্গনে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে, ভালোবাসার মধুর রসসিক্ত হয় উভয়ের মণ, প্রাণ ও দেহ। এজিয়ান সাগরের মাঝপথে এসে প্যারিস হেক্টরকে বলেন, হেলেন তাদের সঙ্গে এসেছেন। প্যারিসের কথা শুনে অবাক হয়ে যান হেক্টর! রাগে, দুঃখে, ক্ষোভে চটে যায় প্যারিসের ওপর। নাবিকদের বলে জাহাজ স্পার্টার দিকে ঘুরাতে। কিন্তু প্যারিসের অনুরোধে আর ক্রন্দনে হেক্টর নিজের মত পরিবর্তন করেন। এদিকে স্পার্টার রাজ্যে ছড়িয়ে পড়ে প্যারিস হেলেনকে অপহরণ করে ট্রয়ে নিয়ে গেছে। মেনিলাস পাগলের মতো হয়ে সাহায্যের জন্য হাত বাড়ান আপন ভাই আর্পসের রাজা আগামেননের। আগামেনন গ্রিসের সম্মান ফিরিয়ে আনার জন্য গ্রিসের সব রাজাকে অনুরোধ জানান। প্রায় ১ হাজার জাহাজ নিয়ে ট্রয়ের উদ্দেশে রওনা দেয় গ্রিসবাসী। ট্রয়ে হাসি-আনন্দ ভালোবাসার জীবন আর যৌবনের পূর্ণতা পায় সুন্দরী হেলেন। ট্রয়ে বয়ে যায় হেলেনময়। প্রতিদিন শত শত উপহার উপঢৌকন আসতে থাকে হেলেনের ঘরে। প্যারিস নিজের জীবনের স্বার্থকতা আর ভালোবাসার স্পষ্টতা খুঁজে পায় হেলেনের হৃদয়ে। ভালোবাসার অতল সমুদ্রে ভাসতে থাকে প্যারিস আর হেলেন। হঠাৎ রাজ্যময় বিপদ ঘণ্টা বাজতে থাকে। রাজ্যের প্রজারা-বিপদ সংকেতে দিগ্বিদিক ছোটাছুটি করতে থাকে। রাজ্য থেকে হেক্টর ও তার বাবা দেখতে পায় হাজার হাজার জাহাজ নিয়ে গ্রিকরা ধেয়ে আসছে ট্রয়ের দিকে। মুহূর্তে কালো মেঘ নেমে আসে হেলেনের চোখে-মুখে। গোপনে রাতে ট্রয় থেকে পালিয়ে যেতে চান হেলেন। কিন্তু ধরা পড়ে হেক্টরের হাতে। হেক্টর তাকে সাহস দেয়। এতে ট্রয়ে থেকে যান হেলেন। জাহাজ থেকে সর্বপ্রথম নামেন গ্রিকবীর একলিস। নেমেই যুদ্ধ শুরু করেন একলিস ও তার সঙ্গীরা। প্রথম যুদ্ধেই ট্রয়নগরীর বন্দর দখল করেন নেয় গ্রিকরা। এভাবে টানা ১০ বছর বন্দর ও রাজ্য অবরোধ করে রাখে গ্রিকরা। বিভিন্ন সময়ে যুদ্ধে নিহত হয় একলিসের ভাই উইরোরাস, প্যারিসের বড় ভাই ট্রয়বীর হেক্টর ও নাম না জানা উভয়পক্ষের হাজারও যোদ্ধা। যুদ্ধে সহজে জয়লাভ না করতে পেরে গ্রিকরা প্রতারণার আশ্রয় নেয়। তৈরি করে বিশাল আকৃতির ঘোড়া। যার নাম ট্রোজেন হর্স। ঘোড়ার মধ্যে লুকিয়ে রাখে শত শত সৈন্য। উপহার হিসেবে পাঠায় ট্রয় রাজার কাছে। রাজ্যের বাইরে লুকিয়ে থাকে গ্রিকরা কিন্তু এসবই অজানা থাকে ট্রয়বাসীর কাছে।

মহা-আনন্দে আর উৎসাহে ঘোড়াটিকে রাজ্যের ভেতরে নেয় ট্রয়বাসী। কিন্তু বিধি বাম, গভীর রাতে ঘোড়া থেকে বের হয়ে ট্রয়বাসীর ওপর অতর্কিত হামলা চালায় গ্রিকরা। গ্রিক সৈন্যরা ট্রয় রাজ্যে ধরিয়ে দেয় আগুন। মুহূর্তের মধ্যে দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে ট্রয়নগর। আগুনে পুড়ে হাজার হাজার সৈন্য আর নিরীহ নাগরিক মারা যায় কয়েক। একলিস ছুটে যায় হেলেনকে বাঁচানোর আশায়; কিন্তু প্যারিস তীর বিদ্ধ করে মেরে ফেলে একলিসকে। পালিয়ে যায় হেলেন, জয়লাভ করে গ্রিকরা। কিন্তু যে হেলেনের জন্য এত কিছু তাকে মেনিলাস কাছে পেয়েছিল কিনা তা আজও অজানা।
Share this post :
 
Support : Creating Website | Johny Template | Mas Template
Copyright © 2011. অজানা বিশ্ব - All Rights Reserved
Template Created by Creating Website Published by Mas Template
Proudly powered by Blogger